ঢাকা,সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

আশ্রয় নিতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা

rohগিয়াস উদ্দিন ভুলু , টেকনাফ  ::::

পাশ^বর্তীদেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর সামরিক বাহিনীর বর্বরতা চলছে। নির্বিচারে চলছে গণহারে মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, পুড়িয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে ছোট ছোট শিশুদেরকে। এই নির্মম অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা। এই জুলুম নির্যাতন সইতে না পেরে, নিজের প্রাণ বাচাঁতে পাহাড়-পর্বত, সাগর- নদী, ফাঁড়ি দিয়ে টেকনাফ উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপকুল দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। গতকাল ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২ টায় টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের আওয়াতাধীন নয়াপাড়া রেজিষ্টাট রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও লেদা আনরেজিষ্টাট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে দেখা যায়, উক্ত এলাকায় প্রায় ১ মাসের ব্যবধানে নিজের জীবন বাচাঁতে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী ও শিশুরাসহ প্রায় ৩-৪ হাজার রোহিঙ্গাদের আগামন ঘঠেছে। এতে দিনের পর দিন এই ক্যাম্প গুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের কাছে লেদা ক্যাম্পে বসবাসকারী ও নতুনভাবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারিনি। তবে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা এই ক্যাম্পে এসেছে বলে শিকার করেছেন। এর আগে এই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সংখ্যা ২০ হাজার। তিনি আরো বলেন, শত শত নির্যাতিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকতে না পেরে প্রাণের ভয়ে সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের পাহাড় গুলোতে অবস্থান করছে।

গতকাল বেলা ১২টায় লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা একটি পরিবারের ৫ জন সদস্যদের দেখা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন নারী, একজন যুবক, ৫ জন শিশু রয়েছে। পালিয়ে আসা এই পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্বরতার চরম আতংকের কাহিনী। যুবক করিম উল্লাহ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের পরিবারের তিন ভাইকে ধরে নিয়ে গিে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আর আমার বিবাহিত এক বোন ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার পর প্রাণের ভয়ে স্থানীয় কিছু মানুষের সহযোগীতায় পাহাড় জঙ্গল ও নাফনদী ফাঁড়ি দিয়ে স্বামী হারা দুই ভাবী ও তাদের ৫ সন্তান ছোট বোনটিকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি। যুবকটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আরো বলেন, আজ চার দিন ধরে একবারও ভাত খেতে পারিনি। এখন ক্যাম্পে এসে আমাদের এলাকার কোন মানুষকে খুঁজে না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ও ক্যাম্পের ব্লক ঘুরে ঘুরে আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছি। সামরিক বাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও ধর্ষণ থেকে বাচঁতে পালিয়ে আসা জরিনা বেগম বলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তার স্বামী সৈয়দ আলীকে নিজের চোখের সামনে জবাই করে হত্যা করার পর  আমাকে করা হয়েছিল ধর্ষণ। কিন্তু আমি কোন রকম নিজের দুই শিশুকে নিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এখন শুধু একটু আশ্রয় পেলে ভিক্ষা করে হলেও এই দুই শিশুর জীবন বাচাঁতে পারব। এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তের উপকুল গুলোর বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশের প্রশাসনের কর্মকর্তারা কঠোর প্রদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। বাড়া হয়েছে বিজিবি সদস্যদের কড়া নজরদারী। এই কড়া নিরাপত্তার কারনে মিয়ানমারের শত শত নির্যাতিত রোহিঙ্গারা পাহাড়ে জঙ্গলে নদীতে না খেয়ে মারা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এব্যাপারে টেকনাফ সুশীল সমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভিন্ন ভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন , কেউ কেউ বলছেন মানবিক কারনে হলেও মুসলিম দেশ হিসাবে এই নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেওয়া উচিত। আবার অনেকে বলছেন এই সমস্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা যদি দিন দিন বৃদ্ধি পায় তাহলে আমাদের আগামী প্রজ¤œকে রোহিঙ্গাদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা যাবে না। কারন বাংলাদেশে বসবাসরত  রোহিঙ্গরাই যে কোন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকে। তার পাশাপাশি এই রোহিঙ্গাদের সহযোগীতায় দিন দিন ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার অব্যাহত রয়েছে।

পাঠকের মতামত: